মুসলিমবিডি২৪ডটকম
আপনি ধরে নিবেন না যে, আপনার স্বামীর আপনার মনের কথা অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারা উচিত।
সাধারণত মেয়েদের সাইকোলজি এমন হয় যে, তারা ছোট ছোট ডিটেলস গুলো পর্যবেক্ষণ করে ভালো,
কিন্তু ছেলেরা এত ছোট ছোট বিষয় খেয়াল করে স্ত্রীর মনের ভেতরে কি চলছে,
আরো পড়ুনঃ বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন
সেগুলো সব সময়ে বুঝে রেসপন্স করবে,সাধারণত এটা তাদের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য নয়।
যেমন: একটা বোনের গল্পের উদাহরণ দেই। তারা হাজব্যান্ড ওয়াইফ একসাথে মার্কেটে গিয়েছে।
হঠাৎ আপুর চোখ গেল এক গোলাপ বিক্রেতার হাতের দিকে।
গোলাপ বিক্রেতা খুবই করুণ স্বরে সবার সামনে গিয়ে গোলাপ ধরছে আর বলছে,
“একটা গোলাপ মাত্র ১০ টাকা. একটু নিয়ে নেন।”
মানুষ তাকে তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। আপুকে দেখে যেন বিক্রেতা বুঝলো যে, আপু গোলাপ চাচ্ছে।
তখন সে সরাসরি আপুর হাজবেন্ডের সামনে গিয়ে গোলাপ গুলো মেলে ধরল।
আরো পড়ুনঃ যে বিষয়গুলো আপনার দাম্পত্যজীবনকে অশান্তিময় করে তুলবে
আপুর হাজবেন্ড অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে যে দোকানে যাওয়ার কথা, সেই দোকানের দিকেই যাচ্ছিলেন।
মাঝপথে গোলাপ বিক্রেতা পথ ধরে দাঁড়ালে, তিনি কিছুটা বিরক্ত হলেন এবং হাত দিয়ে তাকে সরিয়ে দিলেন।
এই দৃশ্য দেখে আপুর ভুরু কুঁচকে গেল, মাথায় সাথে সাথে চিন্তা চলে আসলো,
“দশ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ আমাকে কিনে দিল না?
তার কাছে আমার দাম ১০ টাকাও না?“কিছুক্ষণ হাঁটার পর আপু বলে বসলো, আপনি কেন আমাকে গোলাপ টা কিনে দিলেন না?”
আপুর হাজবেন্ড খুবই অবাক হয়ে বলল, “ওও তুমি কি আসলেই ওই গোলাপ চাও?
আমি তো জানি না যে, তুমি গোলাপ চাচ্ছ এখন। তুমি চাইলে আমি এখনই তোমাকে কিনে দেই। পিছনে গিয়ে ডাক দিব ছেলেটাকে?
আর তুমি গোলাপ গুলোর দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখোনি?
অনেক পুরান হয়ে গেছে, কালচে দাগ ধরে গেছে, গন্ধ নেই তেমন।
আমি তোমাকে গোলাপ দিলে এমন পুরাতন ফুল কেন দেব?
আমি তোমাকে আরো দাম দিয়ে সুন্দর একটা বড় তোড়া কিনে দিবো ইন শা আল্লাহ!
এই কথা শুনে আপুর মন ঠান্ডা হল। এবং একটু আগে তার মাথায় কেমন নেগেটিভ চিন্তা আসছিল হাজবেন্ডকে নিয়ে, সেটা ভেবে বিব্রত বোধ করল।
এই ঘটনা থেকে একটা বড় শিক্ষা হচ্ছে: শুরুতে এই বোনের মনে কেন এত কষ্ট লাগল?
তার নিজের ধরে নেওয়া নেগেটিভ চিন্তার জন্যই সে কষ্ট পাচ্ছিল।
নিজের মনের ভুল ধারণা যে, “হাজব্যান্ড আমাকে একটা ফুল পর্যন্ত কিনে দিতে চায় না!”
এই চিন্তা করার জন্যই সে কষ্ট পাচ্ছিল। এখানে তার হাজবেন্ডের মাথায়
এমন কোন চিন্তা কখনোই ছিল না বরং সে তার স্ত্রী কে আরো ভালো কিছু সব সময় দিতে চায়।
এবং ছোট ছোট বিষয় খেয়াল করার মত সময়, এনার্জি, মোটিভেশন ছেলেদের একটু কম থাকে।
কারণ স্বভাবগত ভাবেই একজন দায়িত্বশীল স্বামীকে আরো অনেক বড় বড় ক্রাইসিস দেখতে হয়, সংসারের হাল ধরতে হয়,
অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখতে হয়, তাই এটা সবসময় দোষ না যে, তারা ওয়াইফের চেহারা দেখেই কেন মনের কথা পড়তে পারছে না?
মাঝে মাঝে ভেঙ্গে তাদের খুলে বলায় ক্ষতি নেই। তাই এক্ষেত্রে সবাই যদি সহানুভূতিশীল হয় এবং বুঝতে চেষ্টা করে,
“আমার চেহারা দেখেই হাসবেন্ড সব বুঝে ফেলবে এভাবে তাদের সৃষ্টি করা হয়নি।
Mind-reading করতে না পারলেও সে আমাকে ভালবাসে। তাই মনে রাগ পুষে না রেখে,
আমাদের বরং খোলাখুলি কমিউনিকেশন করা উচিত ছিল।
খোলাখুলি আলাপ করলে অনেক ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে যায় ইন শা আল্লাহ।
তাই দাম্পত্য জীবনকে সুস্থ ও বরকতপূর্ণ রাখতে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
(১) কখনো অযাচিত ধারণা করবেন না যে, আপনার হাজব্যান্ডের উচিত ছিল আপনার মনের কথা পড়ে ফেলার।
(২) এরকম ভাববেন না, যে একজন দায়িত্বশীল পুরুষ ইচ্ছা করে আপনাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছে
(৩) কুরআনে আল্লাহ বলেছেন অতি-ধারনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাপ (সূরা হুজুরাত)।
সেজন্য ওভার থিংকিং থেকে বিরত থেকে খোলাখুলি স্বামীর সাথে আলোচনা করুন। ভুল বোঝাবুঝি গুলো ক্লিয়ার করে নিন।
(৪) কথা/রাগ চাপিয়ে না রেখে খোলাখুলি ভদ্র ভাষায়, মাথা ঠান্ডা রেখে আলোচনা করার অভ্যাস করুন, আলাপ করার অভ্যাস করুন।
৫) প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝার চেষ্টা করুন
এবং আল্লাহর কাছে দাম্পত্য জীবনে বরকত বৃদ্ধির জন্য সব সময় দুয়া করুন।
(৬) এই প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আল্লাহর খুশির জন্য নিবেন, এমন নিয়ত শক্ত রাখুন অন্তরে।
না হলে এগুলো করতে মেন্টালি ক্লান্ত লাগবে। আপনার বিয়ের পরিচর্যা করা আপনার ইবাদতের অংশ।